


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নবনির্মিত ভবন আজ উদ্বোধন করা হয়। এদিন সকাল ১০:৩০ মিনিটে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি এই ভবনের উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর চিত্তরঞ্জন মিশ্র ও স্কুলের অধ্যক্ষ লিসাইয়া মেহ্জবিন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সহকারী প্রক্টর, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. লিয়াকত আলী ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক ড. মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর ফলক উন্মোচন, মোনাজাত এবং শহীদ শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে সেখানে বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়ানো হয় এবং স্কুলের তথ্য সম্বলিত একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়।
এই আয়োজনের বক্তৃতা পর্বে শিক্ষামন্ত্রী ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন এবং ভবনটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।।
শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, শহীদ শেখ রাসেল শুধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র বা আমাদের আজকের প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার স্নেহের ভাই ছিলেন না; তিনি ছিলেন এক প্রতিভাদীপ্ত জাতির জন্য সম্ভাবনাময় কিশোর। তিনি বেঁচে থাকলে আজ জাতিকে কোনো না কোনোভাবে নেতৃত্ব দিতেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘাতকেরা শেখ রাসেলের মধ্যে এক উজ্জল তারুণ্যের চিহ্ন দেখে ছিলো বলেই তারা ১১ বছরের এই শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতকেরা শেখ রাসেলকে হত্যা করলেও হত্যা করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী চেতনাকে। তাই বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ এক যজ্ঞ দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ রাসেল আজ আমাদের শিশু-কিশোরদের মধ্যে এক রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেল মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদ শেখ রাসেলকে দেশ ও জাতির মনে চির জাগরুক রাখার ক্ষেত্রে এক স্থায়ী মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই স্কুলটি শুধু একটি স্কুল না হয়ে এটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিকাশের এক অনির্বাণ বাতিঘর হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের নিবেদিত করবে। তারা জাতিকে বিজয়ের পর বিজয়ের মহাসারণিতে নিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নবনির্মিত চারতলা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২৯ জুলাই ২০১৯। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের ভিতরে ৩.৯৪ একর জুড়ে আছে স্কুলটি। ভবনটির মোট আয়তন ৪,৪৬০ বর্গমিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি ১১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। এই ভবনটিতে ১৬টি ক্লাস রুম, ৮টি ব্যবহারিক গবেষণাগার, ১টি করে লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব, ছাত্র কমনরুম ও ছাত্রীদের জন্য আলাদা কমনরুম, অফিস কক্ষ, ২টি শিক্ষক লাউঞ্চ, অধ্যক্ষের কক্ষ এবং ২টি উপাধ্যক্ষের কক্ষ আছে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য রয়েছে ৮টি টয়লেট বøক। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, খেলার মাঠ, অভিভাবকদের বসার জন্য জায়গা, গাড়ি রাখার ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার জন্য র্যাম্প ইত্যাদি। শিক্ষার্থীসহ প্রাসঙ্গিক নিরাপত্তার জন্য ভবনটি সিসি ক্যামেরার নজরদারির মধ্যে আছে।
প্রসঙ্গত, শহীদ শেখ রাসেলের নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত শেখ রাসেল মডেল স্কুলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নার্সারি স্কুল নামে। সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর হোসনে আরা বেগম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মহিলা ক্লাবের উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন বেগম রাশেদা খালেক। ১৯৯৭ সালে স্কুলটির প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহ ও শিক্ষার্থীর চাপ পূরণ করতে এর জুনিয়র শাখা চালু করা হয়। এসময় স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নার্সারি ও জুনিয়র স্কুল করা হয়। ২০১৩ সালে আবার স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটর ৪৫৪তম সভায় এক সিদ্ধান্তে নাম পরিবর্তন করে শেখ রাসেল মডেল স্কুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।