


কথিত আছে, ১০০০ বছর আগে, আবু আইলি ইবসিনা নামে একজন ডাক্তার ছিলেন। একসময় তিনি খুব দুর্বল ছিলেন এবং অনেক ওষুধ খেয়েও কোনো লাভ হয়নি। পরে তিনি ডায়াটোথেরাপির জন্য এক ধরনের ভাত তৈরি করেন। তিনি মাটন, গাজর, পেঁয়াজ, পরিষ্কার তেল, মাটন তেল, চাল, জল এবং লবণ যোগ করে কম আঁচে সিদ্ধ করেন। খাবারটি রঙ, স্বাদ এবং গন্ধে অনন্য হয়, যা মানুষের ক্ষুধা জাগাতে পারে। তিনি সকাল-সন্ধ্যা একটি ছোট বাটি ভর্তি করে এ খাবার খেতেন এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। আশেপাশের লোকজন খুব অবাক হন। পরে, তিনি এই ‘প্রেসক্রিপশন’ সবার কাছে পৌঁছে দেন এবং এটিই বর্তমানের ‘পিলাফ’।
‘পিলাফ’ হল উইগুর ও উজবেক জাতির ভাতের একটি প্রধান রূপ। উইগুরদের ভাষায় একে ‘বোর্নারো’ বলা হয়। এর প্রধান কাঁচামাল মাটন, চাল, পরিষ্কার তেল, গাজর, পেঁয়াজ ইত্যাদি। রান্না করা হয় ভাজা, ফুটানো ও স্টুইংয়ের মাধ্যমে। তৈরি পিলাফ চকচকে, সুগন্ধিযক্ত এবং পুষ্টিকর। গাজর হল পিলাফের মূল, যা ‘লিটল জিনসেং’ এবং ‘গ্রাউন্ড জিনসেং’ নামে পরিচিত। গাজর পুষ্টিকর। রক্তের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি তৃষ্ণা নিবারণ করে, স্নায়ুকে শান্ত রাখে এবং বুদ্ধিমত্তা উন্নত করে। পেঁয়াজকে সিনচিয়াংবাসী বলে পিয়াজি। এটিও পিলাফের একটি অপরিহার্য উপাদান। এতে প্রচুর প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, শর্করা থাকে এবং এতে মারকাপটান, ডিসালফাইডস, ট্রাইসালফাইড এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে। পেঁয়াজ সর্দি, মাথাব্যথা, ঠাসা নাক, স্ট্রোক, ফোলা মুখ এবং আমাশয় নিরাময়ে কার্যকর। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পেঁয়াজের রক্ত জমাট বাঁধানোর ক্ষমতা আছে। তাই ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলো পেঁয়াজকে ‘সবজির রানী’ বলে।
সিনচিয়াংয়ের মুসলমানরা এই খাদ্য উপাদানগুলোকে একত্রিত করে। কারণ, এসব কাঁচামাল পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। তাই, পিলাফকে উইগুরা পুরুষদের জন্য ‘বুগাজি’ (পুষ্টি) বলে এবং সিনচিয়াংয়ের হান জাতির জনগণ একে ‘দারুণ টনিক’ হিসেবে মানে।
লেখিকা: ওয়াং হাইমান (ঊর্মি)
সাংবাদিক, বাংলা বিভাগ
চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং চীন।