


চলতি বছর ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ প্রস্তাব উত্থাপনের দশম বার্ষিকী। চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই উচ্চ গুণগত মানের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য একটি নতুন শক্তি হয়ে উঠেছে। চীনের শুল্ক সাধারণ কাস্টমসের সাধারণ প্রশাসনের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে চীনের বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমদানি-রফতানির মূল্য ছিল ৭.৮৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ২৬.৭ শতাংশ বেশি।
২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত, চীন ১৪৯টি দেশ ও ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় সহযোগিতাচুক্তি স্বাক্ষর করেছে; প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ স্কেলসহ ৩০০০টিরও বেশি সহযোগিতামূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। গত দশ বছরে, অধিক থেকে অধিকতর চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান যেখানে যেখানে বিনিয়োগ করেছে, সেখানকার স্থানীয় জনগণের সাথে জয়-জয় ও যৌথ উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে ও করছে।
উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথা ধরা যাক। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে চীনা বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিশাল ভূমিকা পালন করে চলেছে। বাংলাদেশে প্রায় সব বড় আকারের প্রকল্প, যেমন পাওয়ার প্লান্ট, বিমানবন্দর, রেলপথ, সেতু, বন্দর, টানেল, চীনা কোম্পানিগুলো নির্মাণ করেছে বা করছে। এসব প্রকল্প বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের বিখ্যাত গার্মেন্টস এন্টারপ্রাইজ–লি ডেচেং গ্রুপ চীনা প্রাইভেট কোম্পানিগুলো গড়ে তুলেছে। স্থানীয়দের জন্য কয়েক হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এই এন্টারপ্রাইজ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে কৃষি, শিল্প, ইলেকট্রনিক তথ্য ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান রয়েছে। টিসিএল, হুয়াওয়েই, এবং জেডি ডটকমের মতো চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্য বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়।
চলতি বছরের ‘দুটি অধিবেশন’-এ, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন, চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সুষ্ঠু ও উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়ন সঠিক দিকনির্দেশনায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
গত ১০ বছর ধরে চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন অব্যাহত হয়েছে। আমেরিকান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১২ সালে চীনের শীর্ষ ১০০ তালিকাভুক্ত কোম্পানির মোট বাজার মূলধনের প্রায় ১০ শতাংশ সরবরাহ করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০২২ সালের শেষ নাগাদ এটি বেড়ে ৪০ শতাংশের বেশি দাঁড়ায়।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ সর্বাধিক জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক গণ-উদ্যোগ এবং বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে৷ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশের অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে। এ উদ্যোগ চীনা ব্র্যান্ডগুলোর আন্তর্জাতিক প্রভাব বাড়িয়েছে এবং ‘মেড ইন চায়না’ ব্র্যান্ডকে নতুন মাত্রা দিতে সাহায্য করছে ও ভবিষ্যতেও করবে।
চীন নতুন যুগে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের উচ্চমানের বাস্তবায়নকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এতে চীনা বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
লেখিকা: ওয়াং হাইমান (ঊর্মি)
সাংবাদিক, বাংলা বিভাগ
চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং চীন।