প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ৮টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে শুরু হওয়া জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ ৮টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়।
গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি একনেক সভা পরিচালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থাপিত প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্য বাস্তবায়ন ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৫ হাজার ৪শ ৪১ কোটি টাকা।
টেবিলে তোলা প্রকল্পগুলোর মধ্যে টাকার অংকে সবচেয়ে বড় প্রকল্প ময়মনসিংহের ‘কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প’। দেশি-বিদেশি অর্থায়নে প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সেতুটি নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা প্রকল্পটি।
পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে আলাদা এসএমভিটি লেনসহ ৪ লেনের সংযোগ সড়ক ও সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের আওতাধীন উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সাথে ঢাকার নিরাপদ, উন্নত ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, শিল্প উন্নয়ন,নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ওই অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নেও সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।আলোচনার টেবিলে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর জন্য তোলা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ সহনশীলতা প্রকল্পটি। মূল অনুমোদিত ৭৪৬ কোটি ৫ লাখ টাকা থেকে সংশোধনী এনে ৬৬ কোটি টাকা ও এক বছর বাড়ানো হতে পারে প্রকল্পটির মেয়াদ। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা শহরে দুটি জরুরি অপারেটিং সেন্টার এবং ১০টি জোন অফিসে স্যাটেলাইট কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে সড়ক পরিবহন বিভাগের মাদারগঞ্জ-কয়রা-মনসুরনগর -সরিষাবাড়ী-ধনবাড়ী সড়ক উন্নয়ন নামের একটি প্রকল্প। সরকার মনে করছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলা থেকে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন, যানজটমুক্ত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। ফলে ওই এলাকার শিল্প ও বাণিজ্যে গতি আসবে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ এর মধ্যে প্রকল্পে সব কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনে প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা নামের একটি প্রকল্পও আনা হয়েছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, সরকারের ‘আমার গ্রাম,আমার শহর’ শীর্ষক কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন এবং যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে প্রকল্পটি।
দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলায় সরকারি তহবিলের ২০৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচে তিন বছর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।
প্রকল্পের আওতায় ৬৪ হাজার বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন, প্রতি খামারে দুজন হিসেবে ১ লাখ ২৮ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ১ লাখ ৪৭ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ এবং ১২৫ কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠন করবে অধিদপ্তর।
এছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট স্মার্ট মৎস্যচাষ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটিও টেবিলে তোলা হয়েছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। প্রকল্পের আওতায় ৮ বিভাগের ১৮টি জেলার ২৯টি উপজেলায় ক্লাইমেট স্মার্ট মৎস্যচাষ প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ব্যবসাবান্ধব সাপ্লাই চেইন এবং বাজার নেটওয়ার্ক প্রসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের বাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং স্টেকহোল্ডারদের জীবিকার মানোন্নয়নসহ টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে মৎস্য অধিদপ্তর। ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির সম্ভাব্য বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
সভায় ১৮০ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর জেলার ঢেপা, পুনর্ভবা ও টাঙ্গন নদীর তীর সংরক্ষণ ও ৭৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের গ্রিড উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আলাদা দুটি প্রকল্প উপস্থাপন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রকল্প, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও ব্যয়ের বিস্তারিত তুলে ধরার কথা রয়েছে পরিকল্পমন্ত্রী এম এ মান্নানের।
Leave a Reply