


ঢাকা, বাংলাদেশ (আগস্ট ৩০, ২০২২): বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বীজ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চীনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাই বপণ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক কাউন্সিলর, লিউইন ইও।
আজ (মঙ্গলবার) রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত এক অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবাইনার) তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ চায়না অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাবকা) “বঙ্গবন্ধুর জীবন স্মরণ: বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী চৌ এনলাইয়ের প্রাথমিক যোগাযোগ-বাংলাদেশ-চায়না সম্পর্কের ভিত্তি”-শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এবং চীনের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে দেশটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী এনলাইয়ের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে ইও বলেন, “দুই নেতার প্রতি আমরা অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।”
চৌ এনলাই (৫ মার্চ ১৮৯৮ – ৮ জানুয়ারি ১৯৭৬) ছিলেন চায়না প্রজাতন্ত্রের সরকার প্রধান যিনি ১৯৪৯ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং দেশ সেবা করেছিলেন।
ইও বলেন: “আমরা আমাদের দৃষ্টিকে সামনের দিকে অগ্রসর করবো এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ সব ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী ও দৃঢ় করতে ভূমিকা পালন করবো।”
বঙ্গবন্ধু ও এনলাইয়ের মধ্যকার সুসম্পর্ক বিশ্লেষন করতে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, এই দুই কিংবদন্তী নেতা একটা পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন যা এই গোটা অঞ্চলের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল।
ইও বলেন: “দুই নেতার মধ্যে যে সাদৃশ্য ছিল তা হলো – দুজনই নিজ দেশ রক্ষা ও উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন একটা বড় লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আর তা হলো – জাতিকে পুনর্জীবিত করা।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চৌ এনলাই যে সম্পর্কের ভিত তৈরি করেছিলেন, তা রক্ষা এবং ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে ইও বলেন: “আমরা এই বীজকে পরিচর্যা করবো, এতে পানি ঢালবো এবং ভবিষ্যতে এই সম্পর্কের বীজ আরো শক্তিশালী করবো।”
দুই দেশের মধ্যে ৪৭ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কুটনৈতিক সম্পর্কের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের ভিত্তিমূল আসলে আরো বহু পুরোনো। “আমরা পরস্পরের প্রতি আরো বেশি সহযোগিতাসুলভ আচরন করবো এবং একসাথে উন্নয়ন করবো।”
গত বছরের জুলাই মাসে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ভাষনের উল্লেখ করে ইও আরো বলেন যে, দুই দেশের স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ককে এক নতুন মাত্র্রায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন: “জাতীয় ও আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ও চীনকে একসাথে কাজ করতে হবে যা হাসিনা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন।”
অ্যাম্বাসেডর মুন্সি ফয়েজ আহমাদ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন এবং অ্যাবকার সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সাহাবুল হক উদ্বোধনী বক্তব্য দেন।
ড. মোহাম্মদ আবুল কাওছার সপন সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেসশালস এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং প্রফেসর ড. সাইয়েদ আনোয়ার হোসেন সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন।
ড. আনোয়ার হোসেন সেমিনারের বিষয়বস্তু অত্যন্ত চমৎকার এবং গবেষনাধর্মী উল্লেখ করে বলেন যে, বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতার অনেক মূল্য রয়েছে। আর বাংলাদেশের গণমানুষের নেতা ও অত্যন্ত মেধাবী রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু এটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এই দুই নেতা তাদের স্ব স্ব দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে জন্মগ্রহন করেছিলেন এবং নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছিলেন ও পরিপক্কতা অর্জন করেছিলেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন: “তারা দুজনেই নিজ দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসকে খুব ভালোভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।” তিনি চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে অনেক লাভবান হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।
সেমিনারের সমাপনি বক্তব্যে মুন্সি ফায়েজ বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমন করেছিলেন। কিন্তু তিনি শুধু চীনকে নিয়ে কেন বই লিখেছিলেন (আমার দেখা নয়া চীন)। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ন।
তিনি বলেন: “প্রকৃত অর্থে, বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, চীনের বিস্তর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন সাধন সহজ হবে।
চীনের ঝেনজু ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ও অ্যাবকার উপদেষ্টা মোহাম্মদ শামছুল হকও সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। সেমিনা্রে আরও উপস্তিত ছিলেন অ্যাবকার যুগ্ন সম্পাদক ড. এ.এ.এম মুজাহিদ ও মারুফ হাসান, অর্থ সম্পাদক ড. মোঃ রাশেদুজ্জামান এবং দপ্তর সম্পাদক ড. মোঃ শিবলী নোমান । এতে শ্রতা হিসেবে নানা শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ নেয়।