নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর দেশের একটি রয়েল ডিস্ট্রিক হিসাবেই পরিচিত বেশী। আমাদের নোয়াখালীতে রয়েছেন অনেক জ্ঞানীগুণীজন যারা দেশ এবং দেশের বাহিরে সব জায়গায়ই নোয়াখালীর নাম সুনাম করেছেন।। আজকে কথা বলবো নোয়াখালীর মাইজদীর একজন গুণী সন্তানকে নিয়ে।
এ মানুৃষটির নাম নূর আল আহাদ । মানুৃষটির জম্ম নোয়াখালীর মাইজদীতে। সেই ১৯৪০ সাল থেকে জনাব আহাদের পরিবার নোয়াখালীর মাইজদী শহরের বসবাস করে আসছেন।জনাব আহাদের দাদা ছিলেন মাইজদী শহরেরই একজন নামকরা ব্যবসায়ী আব্দুর রব ডিলার।জনাব আহাদের নানাও ছিলেন একজন নামকরা ব্যবসায়ী সায়েদ মিয়া যিনি সেই ব্রিটিশ আমলে নোয়াখালীতে প্রতিষ্ঠা করেন নোয়াখালী ট্যানারি যা আজও বর্তমান। নোয়াখালীর প্রথিতযশা সাংবাদিক প্রয়াত জনাব আবদুল কাদের এবং নোয়াখালী পৌরসভার নববইর দশকের জনপ্রিয় মহিলা কমিশনার ফেরদৌস আরা বেগমের একমাএ পুএ সন্তান জনাব আহাদ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় তিনি ছিলেন ডানপিটে। তার শিক্ষাজীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে মাইজদী শহরে।
ছোটবেলায় পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছিল মাইজদী শহরের এক সময় নাম করা কিন্ডারগার্ডেন স্কুল প্রভাতী শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির মাধ্যমে। তার পর প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার মধ্যমে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন নোয়াখালী জিলা স্কুলে। স্কুল জীবনেও তিনি পড়াশোনায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ২০০৫ সালে কৃতিত্বের সাথে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।মা-বাবার ইচ্ছায় ভর্তি হয়েছিলেন নোয়াখালী সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখায়।কলেজ জীবনেও তিনি তার মেধার কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছিলো। ২০০৭ সালে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৫ নিয়ে তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য, তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজে পড়াশোনাকালীন কলেজের প্রথম বর্ষ এবং দ্বিতীয় বর্ষের সবগুলো পরীক্ষায় বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগ মিলে প্রথম ছিলেন যা আজও রেকর্ড হয়ে আছে। উল্লেখ্য , ২০০৭ সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলে অনেকে ভালো করতে পারেন নি।পুরো নোয়াখালীতে একমাত্র তিনিই ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
এইচএসসি পরীক্ষার পর আমাদের দেশের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের গন্তব্য হচ্ছে এডমিশন কোচিং সেন্টারগুলো। কিন্তুু আমাদের জনাব আহাদ এক্ষেত্রেও চমক দেখিয়েছেন।তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোনো প্রকার ভর্তি কোচিংয়ের আশ্রায় নেন নি।আবার তিনি কেবলমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ইউনিটের পরীক্ষা দিয়ে প্রথমবারেই মেধা তালিকায় জায়গা করে নেন। মেধাবী এই মানুষটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পড়াশোনাকালীন তার বাবা মারা যান।বিবিএ শেষ করে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন দেশের প্রথম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে।মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে দেড় বছর কাজ করে একটি কঠিন এসেসমেন্টের মাধ্যমে তিনি মালয়েশিয়ান সরকারের সবচাইতে প্রতিযোগিতামুলক বৃত্তি ইয়াইয়া খাজানা বৃত্তি নিয়ে এমবিএ ডিগ্রী সম্পন্ন করার অভিপ্রায় নিয়ে পাড়ি জমান ইউনিভাসির্টি পুত্রা মালয়েশিয়াতে যার বর্তমান বিশ্ব রাংকিং ১৪৩।মালয়েশিয়ান সরকারের এই বৃত্তিটির জন্য প্রতিবছর প্রায় দুই থেকে তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রীরা আবেদন করেন। চার দিনের কঠোর এসেসমেন্টের মাধ্যমে বাছাই করা হয় কেবলমাত্র দুই জনকে।আমাদের পুরো নোয়াখালী জেলার মধ্যে তিনিই একমাত্র এই বৃত্তির অধিকারী।
মালয়েশিয়া থেকে এমবিএ শেষ করার পর ২০১৬ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি।দেশে ফেরার পর তিনি চেষ্টা করেছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে।কিন্তুু আমরা আমাদের এই মেধাবী মানুষটিকে তার যথাযথ মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়েছি।তার ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানা যায় যে,নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার পর তাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছিলো।কিন্তুু তিনি চিঠি হাতে পাওয়ার ঠিক পরের দিনই তাকে কল করে বলা হয় যে অনিবার্য কারণবশতঃ ইন্টারভিউ স্থগিত করা হয়েছে।নতুন ইন্টারভিউয়ের তারিখ পরে জানানো হবে।এভাবে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে করতে প্রায় দুই মাস শেষ হয়ে যায়।একদিন তিনি নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সাথে দেখা করতে যান।দেখা করতে যাওয়ার পর রেজিস্ট্রার এবং নিয়োগের সাথে জড়িত বোর্ড সিন্ডিকেট সদস্যরা তাকে নানা রকম কারণ দেখান।তিনি কারণগুলোর প্রতিটি বিষয় নিয়ে কথা বলার সর্বশেষ পর্যায়ে তাকে বলা হয়েছিল যে ইন্টারভিউ কার্ড পাঠানোর পর নাকি ক্যান্ডিডেট শর্টলিস্ট করা হয়েছে।কতটুকু দুর্নীতিগ্রস্থ আমাদের সিন্টেম হলে এমন কাজ করতে পারে তারা একটু চিন্তা করুন তো।
কিন্তুু মেধাকে দমিয়ে রাখা যায় না।কালো মেঘকে চিরে যেমন সূর্যের আলো ফিরে আসে।
তদ্রুপ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জনাব আহাদের মূল্য না বুঝলেও ভিনদেশি মানুষজন তার মূল্য বুঝতে পেরেছিলো। ২০১৭ সালে জাপানের একটি রাজ্য সরকার ( প্রিফেকচার বলা হয়ে থাকে জাপানে) এশিয়া মহাদেশের ১৬টি দেশ থেকে গবেষণার উপর ভিত্তি করে ১০ জনকে বাছাই করে। যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে স্থান করে নেন জনাব আহাদ।জাপানের রাজ্য সরকার জনাব আহাদকে ফুল বৃত্তি দিয়ে তাকে নিয়ে যান জাপানে। জনাব আহাদ একটি রিসার্চ বেসড মাষ্টার্স করেন এই বৃত্তির অধীনে। জনাব আহাদের গবেষণার বিষয় ছিলো এভিয়েশন ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং। উল্লেখ্য ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা লোক আমাদের দেশে একেবারেই নেই।কারণ এই বিষয়টি যেমন নতুন তেমন আবার কঠিনও।
পুরো বিশ্বের ১ শতাংশেরও কম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ আছে। তিনি ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও ডাটা সাইন্স, মেশিন লার্নিং, ফিনটেক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ম্যাথেমেটিক্যাল গেম থিওরী ইত্যাদি বিষয় নিয়েও গবেষণা করেন। বর্তমানে তিনি জাপানের একটি নামকরা কোম্পানিতে গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি সোস্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত লেখালেখি করেন পড়াশোনা ও গবেষণা নিয়ে। ইতিমধ্যে তিনি একজন লেখক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছেন। চলতি বছরের বইমেলায় তার একটি বই বেরিয়েছে “মার্কেটিংনামা” নামে।তার ফেইসবুক ও টাইমলাইনের পোস্টগুলো দেখলেই বোঝা যায় তার মেধা এবং মনন কত উন্নত।
দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তিনি প্রতিমাসেই নিত্য নতুন বিষয়গুলো নিয়ে ফ্রি ওয়েবিনার আয়োজন করেন।এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের বাহিরের পড়াশোনার জন্য আগ্রহী করে তুলতে বাংলাদেশ স্কলারশিপ স্কোয়াড নামে তার একটি ফেইসবুক গ্রুগও রয়েছে।যে গ্রুপের মাধ্যমে অনেকেই বৃত্তি পেয়ে দেশের বাহিরে পড়াশোনা করছেন। জনাব আহাদের স্বপ্ন হচ্ছে দেশের উন্নয়নে কাজ করা। তিনি নোয়াখালীর উন্নয়নে কাজ করতে চান এবং নিজের বাবা-মা’র স্বপ্নগুলো পূরণ করতে তিনি কাজ করে যেতে চান।
Leave a Reply