মোঃ রাকিবুল ইসলাম রোমিওঃ
বাংলা ও বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৪’ঠা জানুয়ারি তৎকালীন সময়ের তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক চেষ্টা, প্রেরণা ও পৃষ্ঠপোষকতায় একঝাঁক সূর্যবিজয়ী ও স্বাধীনতাপ্রেমী তরুণদের উদ্যোগে শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
এ সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সব বাধা পেরিয়ে গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের সাথে সর্বাধুনিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে দীর্ঘ ৭৫ বছর অতিক্রম করেছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ দল গঠনের পূর্বেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এ ৭৫ বছরের ইতিহাস জাতির মুক্তির স্বপ্ন, সাধনা এবং সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক বিতর্কের মুখে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামকরণ করা হয়। তৎকালীন সময়ে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন সংগঠনটি করতে ছাত্রনেতাদের সাথে পরামর্শ করলে অনেক ছাত্রনেতাই একটি ছাত্র সংগঠন করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হন।
অবিভক্ত পাকিস্তানের সর্বপ্রথম এ ছাত্র সংগঠন যাত্রা শুরু করলে নাইম উদ্দিন আহমেদ আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত হন। এসময় তিনি সংগঠনের কনভেনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তৎকালীন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকেই সবকিছু করতে হতো। পরবর্তীতে সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলে এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দবিরুল ইসলাম ও খালেক নেওয়াজ খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮’র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করতে, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে, ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও জাতির জনকের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশ ও দেশের আপামর সাধারণ মানুষের জন্য অধিকার আদায় ও রক্ষার্থে ছাত্রলীগ সর্বদা সোচ্চার আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫’ ই আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশ, বাংলার সাধারণ জনগন, গণতন্ত্র সবকিছু কোনঠাসা হয়ে পড়লেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন থেমে থাকেনি।
১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) দেশে ফিরে স্বাধীনতার চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ধারা পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের সূচনা, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ও যুদ্ধাপরাধী মুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মানে ভ্রাতৃপ্রীতম সংগঠন হিসেবে তাঁর স্নেহাস্পদে সাথে থেকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস সংগ্রাম দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে দেশের সংকটেও সমান তালে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ব্যাপক প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত হয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের মর্মান্তিক ভয়াবহ বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে এ সংগঠনটি। এসময় সাধারণ মানুষকে উদ্ধার কার্যক্রম থেকে শুরু করে খাবার স্যালাইন তৈরিসহ সকল সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছে ছাত্রলীগ।১/১১ সময় শেখ হাসিনাসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলো যারই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজবন্দীরা মুক্তি পেয়ে ২০০৮ সালে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের যাত্রা শুরু হয়।
সময়ের পরিক্রমায় মহামারী কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, হত দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, অসুস্থ মানুষদের বাড়িতে ঔষধ প্রেরণ, অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া, মোবাইল ফোনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, পবিত্র রমজানে ইফতার বিতরণ, বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেয়া, মাস্ক বিতরণ, বিশ্ববিদ্যালয়-জেলা-উপজেলার অলিগলিতে সাবান পানির ব্যবস্থা করা, করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন ও অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নসহ নানা কার্যক্রম চালিয়েছে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠনটি শিক্ষার সাথে দীক্ষা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবিক গুণাবলির সংমিশ্রণে ৭৫ বছর অতিক্রম করেছে এটা অত্যন্ত গৌরবের ও আনন্দের। এ সংগঠনের নবনির্বাচিত সংগ্রামী সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান’কে পবিত্র দায়িত্ব দেয়াতে সংগঠনটি ঐতিহ্যবাহী প্রাণ ফিরে পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
অনাগত প্রজন্মের লড়াই হোক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ও স্বাধীনতার স্বপক্ষে। মেধাবীরা দেশ গড়ার কাজে লাগুক, স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিধৌত হোক নতুন প্রজন্মের বিবেক ও চেতনা।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলভাবে বাস্তবায়ন করে আগামীতেও তাঁর স্বপ্নের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর সোনালী অতীতের মতো আগামীতেও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়বে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যাত্রার শুরু থেকে(দবিরুল-নেওয়াজ) সকল সংগ্রাম-সংকট মোকাবেলার ন্যায় আজ অবধি (সাদ্দাম-ইনান) সময়ের প্রয়োজনে সকল উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে ছাত্রসমাজকে গড়ে তুলবে এবং সকল অশুভ শক্তিকে পিছনে ফেলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে বলে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মী ও ছাত্রসমাজ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
# লেখকঃ romeo.dumki@gmail.com, শিক্ষার্থী, এমবিএ (ম্যানেজমেন্ট) পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (পবিপ্রবি শাখা)।
Leave a Reply