


গল্প : পিশাচ
ক্যাটাগরি : হরর রহস্য
পর্ব : ২য়
লেখক : মোঃ রাজন ইসলাম
আমাকে তিন দিন উলঙ্গ করে ক্রাশের সাথে বেঁধে রাখে। আমার বাবা যখন রাজা ছিল তখন দেখেছি কত অপরাধীকে এভাবে বেঁধে রেখে শাস্তি দেওয়া হতো। আর আজ আমাকে এই শাস্তি পেতে হচ্ছে।
তিনদিন পর আমাকে একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয় ।রুমটা অনেক অন্ধকার। চারিদিকে লোহা দেওয়া আবদ্ধ ঘর। অনেক সৈন্য পাহারায় আছে। তবে পুরো কারাগারে শুধু আমি একা আর কোন কয়েদি নেই।
আমার বাবা মার মৃত্যুর পর আমাকে পিশাচ সিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। সেজন্য হয়তো আমার কাছে কোন কয়েদি রাখা হয়নি। দুইদিন অনেক কষ্টে কেটে যায়। ঠিকমতো খেতে দেয় না। কোন কাপড় দেয় না পড়তে। আমি একসময় নতুন নতুন কাপড় পরতাম কিন্তু এখন আমি উলঙ্গ। নিয়মিত সকাল সন্ধ্যা শিকলের বেরি দিয়ে আমাকে মারতো। আর কি কি সব ধোয়া দিয়ে অন্ধকার করে দিত।
আমার অনেক কষ্ট হতো এভাবে থাকতে। আমি তাদের বলতাম আমি পিশাচ না। আমিও মানুষ । আমার উপর এমন নির্যাতন করো না । আমি সহ্য করতে পারি না। দুইদিন পর সকালে কারাগার আবার খোলা হয়। মনে হয় আজ আমাকে আবার শিকলের বেরি দিয়ে মারবে। তাই কারাগারে এক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে আছি। কিন্তু আজ কেউ মারতে আসেনি একটু পর দুইটা মেয়েকে আমার রুমে ঢুকিয়ে দেয়।
তারা দুজন একই রকম দেখতে ছিল। মনে হয় জমজ হবে। তাদের শরীরেও কোন কাপড় নেই । পুরো শরীরে আঁচড়ের দাগ। দুজন এক কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে।
আমার দিকে অনেক আগ্রহ সহকারে তাকিয়ে আছে। আমি তাদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি তখন তারা বলে।
–আমাদের দিকে আসবে না। আমরা আর পারবোনা।
–কি পারবে না তোমরা ? আর আমাকে দেখে তোমরা ভয় পাচ্ছ কেন?
–আমাদের কাছে আসবে না দূরে যাও প্লিজ।
তারা আমাকে তাদের কাছে যেতে দিচ্ছিল না কিন্তু কেন তারা এমন করছে?
–আমিও তোমাদের মত মেয়ে আমাকে দেখে তোমরা ভয় পাচ্ছ কেন?
–তুমি আমাদেরকে আবার প্রিন্সের কাছে নিয়ে যাবে না তো??
–না আমি তোমাদের কোথাও নিয়ে যাবো না আমার কাছে এসো।
তারপর দুজন আমার কাছে আসে। আমার পাশে বসে। আমার পাশে বসতে তারা ভয় করছিল। আমি তাদের সান্তনা দেই। তোমাদের ভয় নেই আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করব না। তখন তারা দুজন একটু নিশ্চিত হয় । আমি তাদেরকে বলি।
–তোমরা কোন প্রিন্সের কথা বলছো?
–নতুন রাজার ছেলে
–কে এখন রাজা?
–এখানকার মন্ত্রী এখন নতুন রাজা এবং তার ছেলে প্রিন্স।
ধোকাবাজ মন্ত্রী আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার নামে চারদিকে নানা রকম কথা ছড়িয়ে দেয়। আর সে এখন রাজা।
–তোমরা প্রিন্সকে ভয় পাও কেন?
–অনেক কাহিনী শুনবে??
–হ্যাঁ বল আমি তোমাদের সব কথা শুনবো। তারপর তারা বলতে লাগলো।
আমরা রাজ্যের প্রান্তের এলাকায় থাকতাম। আমাদের বাবা ছিল । কিন্তু নিজের মা ছিল না । সৎ মা ছিল। আর আমরা দু’বোন বাদেও আমাদের আরেকটা বোন ছিল। আমাদের দুই বোনের নাম লিসা আর থিসা। জন্মের সময় আমাদের মা মারা যায়। পরে আমাদের মানুষ করার জন্য বাবা আরেকটা বিয়ে করে। কিন্তু আমাদের সৎ মা আমাদের দুই বোনকে দেখতে পারত না। সব সময় খারাপ ব্যবহার করত। আমাদের সৎ মায়ের আরেকটা মেয়ে হয় নাম মিকি ।
আমরা বাসার পাশে প্রতিদিনের মতো খেলছিলাম। তখন অনেকগুলো ঘোড়া নিয়ে কিছু মানুষ আমাদের কাছে এসে থামে। আমরা দুই বোন ঘরের মধ্যে চলে যাই। আমাদের মা বাইরে যায় আর অনেকক্ষণ পরে ফিরে আসে। এসে বলে তোমরা দুই বোন আজ থেকে শহরে থাকবে। তোমাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি । আর কতদিন বসে বসে খাবে। আমরা যেতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু আমাদেরকে জোর করে ওই লোকগুলোর সাথে পাঠিয়ে দেয়।
আর আমাদেরকে তারা রাজবাড়ীতে নিয়ে যায় না । নিয়ে যায় মন্ত্রীর বাড়িতে। আর মন্ত্রীর ছেলে আমাদের দু বোনকে তার দাসী বানিয়ে রাখে। যখন মন চাইতো আমাদের দুজনের সাথে যৌন নির্যাতন করতো। সেখানে আমাদের মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। সে মন্ত্রীর পুত্র । আর আমরা সাধারণ প্রজা। আমাদের শরীর খারাপ করলেও সে আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেনি।
তার যৌন পিপাসা যখন মিটে যায় তখন সে আমাদের তার কাছের লোকজনের কাছে দিয়ে দেয়। তারাও আমাদের ওপর নির্যাতন চালাত। আমরা এসব সহ্য করতে পারছিলাম না তাই একদিন বলে বসি তোরা নরকে যাবি। তোদের অকাল মৃত্যু হবে। পরের দিন এক সৈন্যের কিভাবে হঠাৎ করে মৃত্যু হয়ে যায়। তখন তারা আমাদের অভিশপ্ত জবান বলে। অনেক নির্যাতন করতো।
তারপর আর আমাদের সাথে কেউ যৌন ক্রিয়া করতে আসে নি। কিন্তু আমাদের দুই বোনকে প্রতিদিন বেত দিয়ে মারত। আর আজ এখানে নিয়ে এসেছে।
তাদের দু বোনের কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায় । তাদের দু বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরি । আমার থেকে তাদের কষ্টটা অনেক বেশি। তারা ছোটবেলায় মায়ের আদর পায়নি। আবার বড় হয়ে নির্যাতনের শিকার।
–কিন্তু তুমি কে ? আর তোমাকে কেন এভাবে এখানে রেখেছে?
–আমিও তোমাদের মত নির্যাতনের শিকার আমাকে এরা পিশাচ সিদ্ধ মনে করে।
–আমাদের মতই তাইলে তোমার কপাল খারাপ?
— হ্যাঁ ঠিক বলেছ। আমাদের কপাল খারাপ।
তাদের দুই বোনকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে থাকি। তারা হয়তো অনেকদিন ঘুমায়নি। আমার বুকে তারা মুখ ঘষতে থাকে আর চোখগুলো ছোট ছোট হতে থাকে তারপর একসময় তারা ঘুমিয়ে যায়। আমি তখন অনেকটা শান্তি পাচ্ছিলাম । এই নরকের ভেতর দুইটা সঙ্গী তো পেলাম। আবার অনেক অনেক কষ্ট হচ্ছিল ছোটবেলা থেকে এরা দুই বোন কষ্টের মধ্যেই আছে জানিনা এদের কষ্ট কখন কিভাবে শেষ হবে।
এই কষ্ট কি আদতে শেষ হবে? নাকি চলতেই থাকবে? জানিনা এই কষ্টের মধ্যেই হয়তো তারা পরলোক গমন করবে। মন থেকে চাই পরলোকে তারা যেন স্বর্গে যায় সেখানে তারা অনেক সুখে থাকবে।
পৃথিবীতে তো সুখ পায়নি এখন মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। তারা দুই বোন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন একটু পর পর আমার বুকে মুখ ঘষছে। আমার তখন লজ্জা লাগলেও তাদেরকে জড়িয়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি।
পরের দিন আমাদের তিনজনকে মূল শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে একটি জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। একটা দিঘিতে। সেখানে পুকুরে লাল শাপলাতে ভরপুর।
আমাদেরকে পুকুরের কাছে নিয়ে যায় তারপর কোথা থেকে একদল তান্ত্রিক আসে। তাদের মুখে কালো কালি দিয়ে কি সব চিহ্ন আকানো। তারা কি সব বলছে কিছু বুঝতে পারছি না লিসা থিশা অনেক ভয় পেয়ে যায়। তারা আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ায় । আমি তাদের দিকে তাকাই তারা আমার দিকে কেমন ভয়ার্থ চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি তাদেরকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলি। বলি আমি তো আছি। কোন ভয় নেই তোমাদের কিছু হবে না। আমাদের তিনজনকে তিনটা বেদির উপর বসানো হয় আর চারদিকে তান্ত্রিকরা ঘুরছে আর কি যেন সব বলছে। সাদা রংয়ের পাউডার জাতীয় কিছু আমাদের মাথার উপর ছিটাচ্ছে।
পরিবেশ তখন থমথমে বিরাজ করছে।
একসময় তান্ত্রিক টা আমাদের দিকে তাকায় আর বলে এখন দীঘিতে নামতে হবে। আর গুনে গুনে সাতটা ডুব দিতে হবে। প্রহরীরা আমাদের কাছে আসতে চাইলে তাদেরকে মানা করে বলে এরা পিশাচ সিদ্ধ মেয়ে। পুকুরে নামলে পুকুরের পানি পিশাচের অনুকূলে চলে আসবে। তোমরা তাদের সাথে গেলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
প্রহরীরা ভয়ে দূরে সরে যায় । কিছু তান্ত্রিক আমাদের কে নিয়ে পানিতে নামে । পানিতে নামার পর আমাদের বিভিন্ন গোপনাঙ্গে হাত দিতে থাকে যা আমাদের সহ্য হয়নি। লিসা থিশা চুপ করে সহ্য করছিল কিন্তু আমি তা পারিনি। আমি তাদের দিকে রাগের চোখে তাকাই আর বলি তোরা পানিতে ডুবে মরবি। তারা আমাদের চোখে কি দেখে জানিনা। আমাদেরকে পানিতে রেখেই ওপরে উঠে যায়। তাদের কথা না শুনলে আমাদের উপর আরো নির্যাতন করবে । তাই আমরা সাতটা করে ডুব দিয়ে গোসল করি । তারপর উপরে উঠে আসি।
তারা আমাদেরকে নিয়ে আবার কারাগারে আসে। কারাগারে রাখার পর তারা চলে যায়। লিসা থিসার চোখে তখনও ভয় বিরাজ করছে। তারা অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে এসব কাজ দেখে। তাদেরকে আমি শান্ত হতে বলি। তারপর তাদের দুই বোনকে আমি জড়িয়ে ধরি আর আমিও ঘুমিয়ে পরি।
ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং সাতবার শব্দ হয় তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বারোটা বাজে। তারপর বইটা বন্ধ করি আর ভাবি এখন বারোটা বাজে কিন্তু সাতবার ঢং ঢং করল কেন বারবার করার কথা ছিল। এসব ভাবছি আর তখন দেখি ঘরির নিচে বিকেলের ওই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আছে । চোখে কষ্টের ছাপ। মুখ দিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে । যেটা দেখে অমনি বইটা রেখে দৌড় দিয়ে বের হয়ে আসি ।
আমি রুমে গিয়ে রুমটা আটকে দেই । অনেক ভয়ানক একটা ব্যাপার । এমন ভাবে প্রতিদিন মেয়েটাকে দেখতে থাকলে কবে আমি নিজেই ভূত হয়ে যাব। দেখা যাবে আমার শরীর ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু আমি আমার মধ্যে নেই। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার তৈরি করতে চলে যায় । খাবার তৈরি করছি । এমন সময় গতদিনের মত ঠান্ডা ঠান্ডা হিম শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এটা কি আমার মনের ভুল ? নাকি এ রান্নাঘরে কোন সমস্যা আছে? অন্য কোথাও এমন হিম শীতল বাতাস হয় না শুধু এই রান্না ঘরেই। আমার তো তখন অনেক ভয় করছে। না জানি আবার সেই উলঙ্গ মুখ দিয়ে গলগল করে মরা কালো কুচকুচে রক্ত বের হওয়া মেয়েটা সামনে দাঁড়ায়। এটা ভাবলেই শরীর বরফের মত শীতল হয়ে যাচ্ছে। বাতাসটা গত দিনের মতো আস্তে আস্তে আরো শীতল হচ্ছিল আর বাতাসের উৎপত্তিস্থলটা আমার দিকে এগিয়ে আসছিল।
আমি তো ভয়ে নড়তে পারছি না আর মনে মনে ভাবছি কখন হিম শীতল হাতটা আমার কাঁধের উপর অনুভূত হয়। এটা ভাবছি তখনই হাতের ছোঁয়া কাঁধের উপর। আমি ভয়ে লাফ দিয়ে উঠেছি । পেছনে তাকিয়ে দেখি জ্যাক দাঁড়িয়ে আছে। আর সাথে সাথে হিম শীতল বাতাসটা থেমে গেল।
–কিরে এভাবে লাফিয়ে উঠলি কেন?
–এভাবে কেউ পিছন থেকে হাত দেয়?
–রাস্তা পিছন থেকে তাহলে কিভাবে সামনে থেকে আসব?
–ডাক দিয়ে তো পিছন থেকে কাঁধে হাত দিতে পারতিস
–আচ্ছা ঠিক ।আছে ভুল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি খাবার বানা। আজকে কলেজে যেতে হবে।
–ঠিক আছে তুই বাইরে যা আমি খাবার রেডি করে আসছি
–তাড়াতাড়ি কর
–ঠিক আছে
জ্যাক যখন রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল তখন মনে হল সব শীতল বাতাস তার পেছনে চলে গেলো। আমি জ্যাকের যাওয়ার দিকে তাকালাম। জ্যাক দরজার কাছে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকায় তার চোখ গুলো কেমন লাল লাল লাগছিল । আমি অনেকটা ভয় খেয়ে যায় । জ্যাকের আবার কি হলো।
জ্যাক সামনে ঘুরে চলে যায় । আমি খাবার রেডি করছি আর ভাবছি জ্যাকের চোখ হঠাৎ লাল হয়ে গেল কেন? তার সাথে কি এই কাহিনীর কোন রহস্য আছে?
তার সাথে কি করে থাকবে? সে তো এই দেশের না । নাকি শীতল বাতাসটা তার উপর কোন প্রভাব ফেলেছে? কিছু মাথায় ঢুকছেনা।
তাড়াতাড়ি খাবার রেডি করে বাইরে আসলাম । জ্যাককে খেতে ডাকলাম। জ্যাক খেতে আসলো একদম স্বাভাবিকভাবে । আমার মনে হচ্ছে তখন আমি ভুল কিছু দেখেছি । তখন ভূত-প্রেত নিয়ে ভাবছিলাম তাই হয়তো।
খাবার খেয়ে বের হয়ে গেল তার নাকি জরুরী কি কাজ আছে। জ্যাক বেরিয়ে যাবার পরে আমিও বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলাম। শার্ট পরে বের হব তখন খেয়াল করে দেখি শার্টের ওপর কালো রঙের কিছু ভরে আছে। আমি বাথরুমে যাই পরিষ্কার করতে । পরিষ্কার করে মুখ ধুচ্ছি । হঠাৎ কাঁধের উপর ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম । কাঁধের উপর তাকিয়ে দেখি আবারো কালো কিছুর দাগ ভরে আছে । আমি তো মাত্র পরিষ্কার করলাম। তাহলে কোথা থেকে আসলো । আমি আবারো পরিষ্কার করলাম শার্ট টা।
পরিষ্কার করে চলে আসি তখন ঠিক আবারও কাঁধের উপর ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম। তাকিয়ে দেখি আবারও সেই কালো দাগ। আমার সাথে কি হচ্ছে এসব। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি কি ঘুমিয়ে আছি? । হাতে চিমটি কাটলাম। না জেগে আছি । তাহলে বারবার এই দাগ কোথায় থেকে আসছে।
ঠিক তখনই কি মনে করে ওপরে তাকালাম যা দেখলাম তাতে আমার চোখগুলো বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সেই উলঙ্গ মেয়েটার ছাদে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলানো । আর তার মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে আমার শার্টে পড়ছিল। আমি চিৎকার করে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। রুমে গিয়ে বই নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাব এমন সময় দরজাটা আটকে যায়। আর আমি দরজার সাথে ধাক্কা খাই। আমার কপাল কেটে যায়। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসছে। মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে চোখ দিয়ে কোন তরল জাতীয় জিনিস বেয়ে পড়ছে। এসব একজন স্বাভাবিক মানুষের দেখা সম্ভব না। আমার তো ভয়ে কান্না বের হয়ে গেছে। আমি তখন ওই মেয়েটাকে বলি তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন? ।
আমি একজন জীবিত মানুষ আমার পক্ষে এসব দেখা সম্ভব না আমার অত সাহস নেই। তুমি কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও? তাও মেরে ফেলো কিন্তু প্রতিবার এরকম বীভৎস্য চেহারা নিয়ে এসো না। আমাকে যেতে দাও।
তখন হঠাৎ মেয়েটা উধাও হয়ে যায়।
দরজাটা খুলে যায় ।আমি বেরিয়ে যাই বাড়ি থেকে। সোজা হাসপাতাল যায় তারপর মাথায় ব্যান্ডেজ করে কলেজে যায়। আমাকে দেখে জ্যাক জিজ্ঞেস করে মাথায় কি হয়েছে আমি তাকে এড়িয়ে যাই আর বলি বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গেছি। জ্যাক আমার কথা বিশ্বাস করে না। আমরা কলেজ শেষ করে বাসায় ফিরছি।
আমার আর এই বাড়িতে থাকা সম্ভব না। এরকম অলৌকিক ভূত প্রেতের চেহারা দেখতে দেখতে কবে বলে নিজেই ভূত হয়ে এই বাড়িতে ঘুরে বেড়াবো।
বাসায় এসে আমি বাথরুমে যাই হাত মুখ ধুয়ে সব কিছু প্যাক করে চলে যাব। আর পরে বাড়িটা কারো কাছে বিক্রি করে দেব। আমার কাছে এত কম দামে কেন বাড়ি টা বিক্রি করেছে তা এখন বুঝতে পারলাম। একটু যাচাই-বাছাই করে যদি বাড়িটা কিনতাম তাইলে আর এখন এই পরিস্থিতিতে করতে হতো না।
হাত মুখ ধুচ্ছি তখন আয়নায় দেখছি কিছু লেখা উঠছে কিন্তু লেখাগুলো আমি বুঝতে পারছিলাম না। অনেক কষ্টে আমি লেখাটা পড়লাম । এমন লেখা ছিল–
আমি এনা আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। এই বাড়িতে এর আগে আরো অনেক জন এসেছে কিন্তু তারা কেউ একদিনের বেশি থাকতে পারেনি। তুমি এখানে আছো। তুমি তাদের থেকে অনেক বেশি সাহসী।
তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা বন্ধু। তুমি পারো এনার রহস্য উদঘাটন করতে। আমি তোমার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারবো না । অনেকবার চেষ্টা করেছি কথা বলার কিন্তু যখনই কথা বলতে যাই তখনই মুখ দিয়ে রক্ত বের হয় । তাই তোমাকে সব কিছু লিখে বলতে হচ্ছে। আমি তোমার সামনে আর কখনো এভাবে আসব না। তুমি তাও আমাকে ছেড়ে যেও না । আমাদেরকে মুক্তি দাও তুমি।
লেখাগুলো পড়ে চোখটা ভিজে গেছে । সত্যি তো এনার জীবনটা কত কষ্টের। তাহলে এতদিন সে আমার সাথে কথা বলতে এসেছে কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে কথা বলতে পারেনি। ভয় দেখানোর কোন উদ্দেশ্য ছিল না।
আমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আর বাড়ি থেকে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ছেড়ে ফেললাম। আমি এনার রহস্য উদঘাটন করব আর তাদের তিনজনকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেবো। আমাকে পারতেই হবে।
বাসার সব কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত হয়ে যায়। আর জ্যাক খেয়ে ঘুমাতে যায়। আর আমি খেয়ে বিশ্রাম নেই। জ্যাক ঘুমালে আমি এনার ডাইরিটা পড়তে যাব।
আমি কিছুক্ষণ পর ঐ হল রুমে যাই। কাল যেভাবে বইটা রেখে দৌড় দিয়েছিলাম ঠিক সেভাবেই আছে। টেবিলের কাছে গিয়ে আমি বইটা হাতে নিলাম আর চোখ বুঝে এনার কথা অনুভব করলাম। মনে মনে বললাম এনা আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না। আমি তোমাকে সাহায্য করবো। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত । ঠিক তখনই কানের কাছে দিয়ে একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটা এনা ছিল। টেবিলে বইটা রেখে আমি আবারো পড়া শুরু করলাম। ।