


অহিদুল ইসলাম, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ ২২ বছরেও শেষ হয়নি আমার বাবা আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচার, কবে পাব বাবা হত্যার বিচার নিহতের মেয়ে ঝর্ণা সরেন এর প্রশ্ন।আদিবাসী স্বীকৃতি ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমি অধিকারের আন্দোলনের আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন এর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৮ আগষ্ট দুপূরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুরে তার সমাধীতে শ্রদ্ধাঞ্জলীর ও আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফুল হক চৌধুরী আরব, আলফ্রেডের একমাত্র মেয়ে ঝর্ণা সরেন, নওগাঁ জেলা সিপিবি’র সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা, নওগাঁ জেলা বাসদের আহবায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কামটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গণেশ মাঝি, কেন্দ্রীয় কামটির দপ্তর সম্পাদক সুবাশ হেমব্রম, আলফ্রেড সরেনের বোন আদিবাসী নেত্রী রেবেকা সরেন, আদিবাসী নেতা মঙ্গল কিস্কুসহ জাতীয় আদিবাসী পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন নেতৃবৃন্দ ।
বক্তরা এ সময় বলেন, ২২ বছরেও হত্যা মামলাটির বিচার শেষ না হওয়ায় আদৌ ন্যায় বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ হয়েছে । দ্রুত এই নির্মম হত্যার বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানান হত্যাকান্ডের শিকার সরেনের পরিবার, আদিবাসী নেতা এবং বাম নেতারা।
জানা যায়, সমতলের আদিবাসী গোষ্ঠীর ভূমি অধিকারের বাস্তবায়ন আন্দোলনের জেরে ২০০০ সালের ১৮ আগষ্ট মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লীতে হাতেম-গদাই গংদের সন্ত্রাসীদের হামলায় আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেনকে নৃসংশভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে আদিবাসী পল্লীর ১১টি পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। ঐ সময় তাদের হামলায় আদিবাসী মহিলা-শিশুসহ প্রায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ঘেরাও সহ সারাদেশে আদিবাসী সংগঠনগুলো ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
আলফ্রেড সরেন হত্যার পর তার ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। রেবেকা সরেন বলেন, আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি ও সমতলের আদিবাসী গোষ্ঠীর ভূমি অধিকারের বাস্তবায়ন আন্দোলনের জেরে ১৮ আগস্ট আমার ভাইকে ভূমিদস্যুরা নির্মমভাবে চাইনিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিলেন হাতেম-গদাই। এই হত্যার পর থানায় আমি বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করি ও আমার বড় দাদা জননিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনার সময় যে পরিবারগুলো বসবাস করতের তারা মামলার স্বাক্ষী হওযায় তাদেরকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হতো। জীবনের ভয়ে তারা আজ বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল একইভাবে ২০১২ সালে আমার ছোট ভাইকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তারা এখনো আমাদের উপর বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এবং আজও মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে জমির জন্য আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে সে জমিগুলোও তারা দখল করে খাচ্ছে। এসময় তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি চোখের সামনে দেখেছি আমার ভাইকে হত্যার পর আমার মা-বাবা পাগলের মত হয়ে মারা গেছে। হত্যান্ডের ২২ বছর অতিক্রম হয়ে গেল আজও আমরা বিচার পাইনি। আর বিচার পাব কিনা এইটা নিয়েও আমাদের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে। একটি স্বাধীন দেশে আমরা কখনো এটা ভাবতে পারিনি। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তিনি।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. মহসীন রেজা বলেন, আলফ্রেড সরেনকে হত্যার পর তার বোন রেবেকা সরেন আসামিদের বিরুদ্ধে মহাদেবপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্ত চলাকালে সময়ে তার বড় ভাই জননিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে দুইটা মামলা একইসঙ্গে তদন্তে করে একটি অভিযোগ পত্র দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে মামলাটি নওগাঁ জেলা আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরু হলে আসামিরা জননিরাপত্তা আইনে বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করলে পরবর্তীতে এই রিটগুলো খারিজ হয়ে গেলে আলফ্রেড সরেনের হত্যার বিচার কার্যক্রম চলতে থাকলে আসামিরা হাইকোর্টে রিটের খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের ডিভিশনে মোকদ্দমা আনয়ন করেন।
তিনি আরও বলেন, আপিল ডিভিশনে সে মোকাদ্দমা শুনানি অন্তে আপিল ডিভিশনের বিচারক পুনরায় সেই রিটগুলো শুনানির জন্য হাইকোর্টে পাঠালে রিটগুলো শুনানির জন্য অপেক্ষামান রয়েছে হাইকোর্টে। আলফ্রেড সরেনের হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম বর্তমানে নওগাঁর দায়রা জজ আদালতে স্থগিত অবস্থায় রয়েছে।
আলফ্রেডের একমাত্র মেয়ে ঝর্ণা সরেন এ সময় বলেন, ২২ বছরেও আমার বাবার হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়নি। আদৌ ন্যায় বিচার পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছরেও শেষ হয়নি বিচার। কবে আমি পাব বাবা হত্যার বিচার। দ্রুত এই নির্মম হত্যার বিচার সম্পন্ন করার দাবিও জানান ঝর্ণা সরেন।