করোনাসময়ে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার লক্ষ্যে সরকার ২৩টি প্যাকেজে প্রণোদনার ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে আরও পাঁচটি প্যাকেজ বৃদ্ধি পেয়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮টিতে। কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রথম ২৩টি প্যাকেজের মধ্যে ৫টি প্যাকেজের খুবই দুরবস্থা। প্যাকেজে প্রদত্ত প্রণোদনার সিংহভাগই খরচ হয়নি।
করোনাসময়ে প্রদত্ত ২৩ প্যাকেজের মোট আকার ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে অপর পাঁচটির বাস্তবায়ন হার এমনকি শত ভাগও ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই ১০টি বাদে অন্য ১৩ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার আছে মাঝামাঝি অবস্থায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, ১৪ মাসে মোট অর্থের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ৯৬ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।
শোচনীয় প্যাকেজগুলোর সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, তৈরি পোশাক ও চামড়াশিল্পের দুস্থ শ্রমিক, রপ্তানিমুখী শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কৃষিজীবী এবং করোনা ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীরা। আর সফল প্যাকেজগুলোর উপকারভোগীরা হচ্ছেন রপ্তানিমুখী শিল্পশ্রমিক, রপ্তানিমুখী শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
এ ব্যাপারে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন না হলে তো কিছুই হলো না। দুটি দিক আছে। সরকারের দিক থেকে হয়তো নীতি সমস্যা আছে, আবার শর্ত শিথিল করলেও টাকার অপব্যবহার হতে পারে। এখন দরকার হচ্ছে বহুপক্ষীয় বৈঠক করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘এ প্যাকেজ থেকে ওইভাবে অর্থ ব্যয় না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে টাকা ছাড়ের শর্তে সমস্যা। যে সময়ে টাকা দেওয়া হয়, তাতে রপ্তানিকারকদের খুব বেশি লাভ হয় না। গভর্নরকে জানানোর পর বলেছিলেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন। পরে আর তেমন কিছু হয়নি।’
প্যাকেজগুলোর মধ্যে প্রাক্–জাহাজীকরণ ঋণ পুনঃ অর্থায়ন কর্মসূচি প্যাকেজে বরাদ্ধ ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। এর থেকে খরচ হয় মাত্র ২৯১ কোটি টাকা। কৃষিকাজ যান্ত্রিকীকরণ প্যাকেজে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার দুইশ’ বিশ কোটি টাকা। সেখান থেকে খরচ করা হয় ৪০৮ কোটি টাকা। এসএমই খাতের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার কোটি টাকা। আর খরচ হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে পোশাক ও চামড়াখাতে শ্রমিকদের সহায়তায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ১৫শ’ কোটি টাকা, যার থেকে মাত্র ৬ কোটি টাকা খরচ হয়। সর্বশেষ স্বাস্থ্যবীমা এবং জীবনবীমায় প্রণোদনা দেওয়া হয় ৭শ’ ৫০ কোটি টাকা, আর খরচ করা হয় মাত্র ৭০ কোটি টাকা।
Leave a Reply